সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

তুলসী গাছের ভেষজ গুনাবলী

তুলসী:
তুলসী একটি ঔষধিগাছ। তুলসী অর্থ যার তুলনা নেই। সুগন্ধিযুক্ত, কটু তিক্তরস, রুচিকর। এটি সর্দি, কাশি, কৃমি ও বায়ুনাশক এবং মুত্রকর, হজমকারক ও এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে বিশেষ করে কফের প্রাধান্যে যে সব রোগ সৃষ্টি হয় সে ক্ষেত্রে তুলসী বেশ ফলদায়ক।
ঔষধিগুণ:
শিশুদের সর্দি কাশির জন্য এটি একটি মহা ঔষধ হলেও যে কোন বয়সের মানুষই এ থেকে উপকার পেয়ে থাকে । শুধু পুজো-অর্চনাতেই লাগে না ৷ তুলসী পাতার অনেক গুণ রয়েছে ৷
* জ্বর হলে জলের মধ্যে তুলসী পাতা, গোল মরিচ এবং মিশ্রী মিশিয়ে ভাল করে সেদ্ধ করুন ৷ অথবা তিনটে দ্রব্য মিশিয়ে বড়ি তৈরি করুন ৷ দিনের মধ্যে তিন-চার বার ঐ বড়িটা জলের সঙ্গে খান ৷ জ্বর খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে।
* কাশি যদি না কমে সেই ক্ষেত্রে তুলসী পাতা এবং আদা পিষে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খান ৷ এতে উপকার পাবেন ৷
* পেট খারাপ হলে তুলসীর ১০ টা পাতা সামান্য জিরের সঙ্গে পিষে ৩-৪ বার খান ৷ পায়খানা একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে, মানে পায়খানার ওই সমস্যাটা আর কি!
* মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে দিনে ৪-৫ বার তুলসী পাতা চেবান ৷
* ঘা যদি দ্রুত কমাতে চান তাহলে তুলসী পাতা এবং ফিটকিরি একসঙ্গে পিষে ঘা এর স্থানে লাগান, কমে যাবে ৷
* শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগান, এতে জ্বালা কমবে ৷ পোড়া জায়গাটা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে ৷ সেখানে কোন দাগ থাকবে না ৷
* ত্বকের চমক বাড়ানোর জন্য, এছাড়াও ত্বকের বলীরেখা এবং ব্রোন দূর করার জন্য তুলসী পাতা পিষে মুখে লাগান ৷
* বুদ্ধি এবং স্মরণশক্তি বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন ৫-৭ টা তুলসী পাতা চিবান ৷
* প্রস্রাবে জ্বালা হলে তুলসী পাতার রস ২৫০ গ্রাম দুধ এবং ১৫০ গ্রাম জলের মধ্যে মিশিয়ে পান করুন ৷ উপকার পাবেন ৷
* ত্বকের সমস্যা দূর করতে তিল তেলের মধ্যে তুলসী পাতা ফেলে হালকা গরম করে ত্বকে লাগান ৷

ব্যবহার:
আমাদের দেশে ছেলেমেয়েদের সর্দি-কাশিতে তুলসী পাতার রস ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয়। এসব ক্ষেত্রে কয়েকটি তাজা তুলসী পাতার রসের সাথে একটু আদার রস ও মধুসহ খাওয়ানো হয়। বাচ্চাদের সর্দি-কাশিতে এটি বিশেষ ফলপ্রদ। তাজা তুলসী পাতার রস মধু, আদা ও পিঁয়াজের রসের সাথে এক সাথে পান করলে সর্দি বের হয়ে যায় এবং হাপানিতে আরাম হয়।
ঔষধি গুণাগুণ:
* পেট কামড়ানো, কাশি: তুলসী পাতার রসে মধু মিশিয়ে খাওয়ালে বাচ্চাদের পেট কামড়ানো, কাশি ও লিভার দোষে উপকার পাওয়া যায়।
* ঘামাচি ও চুলকানি: তুলসী পাতা ও দুর্বার ডগা বেটে গায়ে মাখলে ঘামাচি ও চুলকানি ভাল হয়।
দাদ ও অন্যান্য চর্মরোগে: স্থানীয়ভাবে তুলসী পাতার রস দাদ ও অন্যান্য চর্মরোগে ব্যবহার করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। পাতার রস ফোঁটা ফোঁটা করে কানে দিলে কানের ব্যথা সেরে যায়।
* ম্যালেরিয়া: পাতা ও শিকড়ের ক্বাথ ম্যালেরিয়া জ্বরের জন্য বেশ উপকারী। ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক হিসেবে প্রতিদিন সকালে গোল মরিচের সাথে তুলসী পাতার রস খেতে দেয়া হয়। যতদিন সম্ভব খাওয়া যায়।
* বসন্ত, হাম: বসন্ত, হাম প্রভৃতির পুঁজ ঠিকমত বের না হলে তুলসী পাতার রস খেলে তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসবে।
* ক্রিমি: তুলসী পাতার রসের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে ক্রিমি রোগে বেশ উপকার পাওয়া যায়। শুষ্ক তুলসী পাতার ক্বাথ সর্দি, স্বরভঙ্গ, বক্ষপ্রদাহ, উদারাময় প্রভৃতি রোগ নিরাময় করে থাকে।
* পেট ব্যথা: অজীর্ণজনিত পেট ব্যথায় তুলসী পাতার বেশ উপকার সাধন করে থাকে। এটি হজমকারক। প্রতিদিন সকালে ১৮০ গ্রাম পরিমান তুলসী পাতার রস খেলে পুরাতন জ্বর, রক্তক্ষয়, আমাশয়, রক্ত অর্শ এবং অজীর্ণ রোগ সেরে যায়।
* বাত ব্যথা: বাত ব্যথায় আক্রান্ত স্থানে তুলসী পাতার রসে ন্যাকড়া ভিজিয়ে পট্টি দিলে ব্যথা সেরে যায়।
* কীট-পতঙ্গ কামড়ালে: বোলতা, ভীমরুল, বিছা প্রভৃতি বিষাক্ত কীট-পতঙ্গ কামড়ালে ঐ স্থানে তুলসী পাতার রস গরম করে লাগালে জ্বালা-যন্ত্রণা কম হয়।
* সর্দি: যারা সহজেই সর্দিতে আক্রান্ত হয় (বিশেষ করে শিশুদের) তারা কিছুদিন ৫ ফোঁটা মধুর সাথে ১০ ফোঁটা রস খেলে সর্দি প্রবণতা দূর হয়।
তুলসী মূল শুক্র গাঢ়কারক এবং বাজীকারক। তুলসী পাতার ক্বাথ, এলাচ গুঁড়া এবং এক তোলা পরিমাণ মিছরী পান করলে ধাতুপুষ্টি সাধিত হয় যতদিন সম্ভব খাওয়া যায়। এটি অত্যন্ত ইন্দ্রিয় উত্তেজক। প্রতিদিন এক ইঞ্চি পরিমাণ তুলসী গাছের শিকড় পানের সাথে খেলে যৌনদূর্বলতা রোগ সেরে যায়।
কোন কারনে রক্ত দূষিত হলে কাল তুলসিপাতার রস কিছুদিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।শ্লেষ্মার জন্য নাক বন্ধ হয়ে কোনো গন্ধ পাওয়া না গেলে সে সময় শুষ্ক পাতা চূর্ণের নস্যি নিলে সেরে যায়। পাতাচূর্ণ দুই আঙ্গুলের চিমটি দিয়ে ধরে নাক দিয়ে টানতে হয়, সেটাই নস্যি। তুলসী পাতা দিয়ে চায়ের মত করে খেলে দীর্ঘদিন সুস্থ থাকা যায়। তুলসী চা হিসাবে এটি বেশ জনপ্রিয়।
তুলসিপাতার রসে লবন মিশিয়ে দাদে লাগালে উপশম হয়।
* প্রস্রাবজনিত জ্বালা: তুলসীর বীজ পানিতে ভিজালে পিচ্ছিল হয়। এই পানিতে চিনি মিশিয়ে শরবতের মত করে খেলে প্রস্রাবজনিত জ্বালা যন্ত্রনায় বিশেষ উপকার হয়।
* কালো দাগ: মুখে বসন্তের কাল দাগে তুলসীর রস মাখলে ঐ দাগ মিলিয়ে যায়। হামের পর যে সব শিশুর শরীরে কালো দাগ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে তুলসী পাতার রস মাখলে গায়ে স্বাভাবিক রং ফিরে আসে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের আয়তন

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলই সবচেয়ে বড় ক্যাম্পাস নিয়ে গঠিত । এই ক্যাম্পাসগুলতে রয়েছে বিশাল জায়গা এবং একজন ছাত্রের জ্ঞানচর্চার নানা উপাদান । জেনে নিন আয়তনের দিক থেকে কোন বিশ্ববিদ্যালয় কত বড় । ১. চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (১৭৫৪ একর) ২. বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (১১৯৬ একর) © বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি তথ্য ও সহযোগিতা কেন্দ্র ৩. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (৭৫৩ একর) ৪. জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (৬৯৭ একর) ৫. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (৬০০ একর) © বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি তথ্য ও সহযোগিতা কেন্দ্র ৬. শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (৩২০ একর) ৭. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া (১৭৫ একর) ৮. চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১৬৩ একর) © বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি তথ্য ও সহযোগিতা কেন্দ্র ৯. রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১৫২একর) ১০. হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১৩০ একর) © বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি তথ্য ও সহযোগিতা কেন্দ্র ১১. খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (১০৬ একর) ১২. খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১০১ একর) ১৩. নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১০১ একর)...

বাংলা টাইপিং এ যুক্তাক্ষর

বিজয় বাংলা টাইপ করার অতি পরিচিত সফটওয়্যার । আমরা যারা বাংলা টাইপ করি বা বাংলায় লেখালেখি করি তাদের অনেকেরই যুক্তাক্ষর জনিত সমস্যা হয় । এই সমস্যা মুক্ত হবার জন্য যুক্তাক্ষরগুলোর টাইপিং প্রনালী দেয়া হলো । বাংলা টাইপিং এ যারা দুর্বল তাদের কাজে লাগবে। ১. ক্ষ = ক+ষ ২. ষ্ণ = ষ+ণ ৩. জ্ঞ = জ+ঞ ৪. ঞ্জ = ঞ+জ ৫. হ্ম = হ+ম ৬. ঞ্চ = ঞ+চ ৭. ঙ্গ = ঙ+গ ৮. ঙ্ক = ঙ+ক ৯. ট্ট = ট + ট ১০. ক্ষ্ম = ক্ষ + ম = ‍ক + ষ + ম ১১. হ্ন = হ + ন ১২. হ্ণ = হ + ণ ১৩. ব্ধ = ব + ধ ১৪. ক্র = ক + ্র (র-ফলা) ১৫. গ্ধ = গ + ধ ১৬. ত্র = ত + ্র (র-ফলা) ১৭. ক্ত = ক + ত ১৮. ক্স = ক + স ১৯. ত্থ = ত + থ (উদাহরন: উত্থান, উত্থাপন) ২০. ত্ত = ত + ত (উদাহরন: উত্তম, উত্তর, সত্তর) ২১. ত্ম = ত + ম (উদাহরন: মাহাত্ম্য) নিচের যুক্তবর্ণের তালিকাটি বাংলা সঠিকভাবে ল িখতে সহায়ক হতে পারে। এখানে বাংলায় ব্যবহৃত ২৮৫টি যুক্তবর্ণ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কোন যুক্তবর্ণ সম্ভবত বাংলায় প্রচলিত নয়। ক্ক = ক + ক; যেমন- আক্কেল, টেক্কা ক্ট = ক + ট; যেমন- ডক্টর (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/ বিদেশী কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত...

আইবি এ সম্পর্কে কিছু তথ্য

আইবিএ কি?? . আইবিএ হলো ইন্সটিটিউট অফ বিজনেস এ্যাডমিন্সট্রেশন। বাংলাদেশের মানুষের কাছে যে কয়ঠি ড্রিগ্রি খুব বেশি সম্মানিত হয় তার একটি হলো আইবিএ থেকে এমবিএ।বাংলাদেশের যে কয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইবিএ থেকে এমবিএ ড্রিগ্রি দেওয়া তার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় র আইবিএ সবার উপরে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় র আইবিএ তে ভর্তি হতে পারা অনেকটা স্বপ্নের মত।বলা যেতে পারে আইবিএ তে পড়তে পারলে জব আপনার পিছনে ঘুরবে আপনি জবের পিছনে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় র আইবিএ সম্মধে একটু আলোচনাঃ . ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইবিএ ইনস্টিটিউট যাত্রা শুরু করে ১৯৬৬ সালে।আইবিএ সংক্রান্ত দেশের সবচেয়ে প্রাচীন শিক্ষাপীঠ হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।পূর্বে বছরে একবার করে এমবিএ(মাস্টার্স অফ বিজনেস এ্যাডমিন্সট্রেশন) কোর্সে ভর্তি করানো হত।কিন্তু বর্তমানে দুবার করে নেওয়া হয়। দেশের মাত্র তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইবিএ ডিগ্রি নেওয়া সম্ভব,তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।১৯৯২ সালে যাত্রা শুরু করে জাবি র আইবিএ।অপরদিকে দেশের দ্বিতীয় সর্ব্বোচ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ...