সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাসকের ঔষধি গুনাবলী জেনে নিন

বাংলার পথে প্রান্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা জাতের উদ্ভিদ । এর মধ্যে ফলজ,বনজ,ঔষধি নানা জাতের গাছ রয়েছে ।
আমাদের চারপাশে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ রয়েছে। এর প্রায় সকলই মানুষের কল্যানে আল্লাহর সৃষ্টি। কিন্তু কোন উদ্ভিদে কি গুন তা আমরা সবাই জানি না। প্রত্যকটি ভেজষ উদ্ভিদেরই কিছু না কিছু ঔষধী গুন রয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সাড়ে পাঁচ শ ঔষধি উদ্ভিদ প্রজাতি বা ভেষজ। ঔষুধ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ভেষজ উদ্ভিদের চাহিদা সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশে ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ইউনানি, আয়ুর্বেদ ও হোমিওপ্যাথি ওষুধ উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি বিউটি পার্লার ও প্রসাধনীতে এখন প্রচুর ভেষজ উপাদান ব্যবহৃত হচ্ছে।
বাংলাদেশে স্বল্পসময়ে কম জমিতে অধিক হারে উৎপাদন করে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব_এমন ঔষধি রয়েছে ২৫টির মতো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে_পুদিনা, ঘৃতকুমারী, থানকুনি, অর্জুন, আমলকী, হরীতকী, কালমেঘ, নিম, বহেড়া, কালিজিরা, বসাক, উলটকমল, অশ্বগন্ধা, সর্পগন্ধা, তুলসী, মেথি, সোনাপাতা, যষ্টিমধু, বাবলা, শতমূলী, ইসবগুল, আদা, রসুন, হলুদ, পিঁয়াজ ইত্যাদি।
বাসক:
বাসক একটি ভারত উপমহাদেশীয় ভেষজ উদ্ভিদ। আর্দ্র, সমতলভূমিতে এটি বেশী জন্মে। লোকালয়ের কাছেই জন্মে বেশী। হালকা হলুদে রংয়ের ডালপালায়ক্ত ১ থেকে ২ মি. উঁচু গাছ, ঋতুভেদে সর্ব্বদাই প্রায় সবুজ থাকে। বল্লমাকারের পাতা বেশ বড়। ফুল ঘন, ছোট স্পাইকের ওপর ফোটে। স্পাইকের বৃন্ত পাতার চেয়ে ছোট। স্পাইকের ওপর পাতার আকারে উপপত্র থাকে যার গায়ে ঘন এবং মোটা শিরা থাকে। ফুলের দল (কোরোল্লা বা পত্রমূলাবর্ত) সাদা বর্ণ। তার ওপর বেগুনী দাগ থাকে। ফল সুপারি আকৃতির; বীজে ভর্তি।

বাসকের ঔষধী গুণ:
তাজা অথবা শুকানো পাতা ওষুধের কাজে লাগে। বাসকের পাতায় “ভাসিসিন” নামীর ক্ষারীয় পদার্থ এবং তেল থাকে। শ্বাসনালীর লালাগ্রন্থিকে সক্রিয় করে বলে বাসক শ্লেষ্মানাশক হিসেবে প্রসিদ্ধ । বাসক পাতার নির্যাস, রস বা সিরাপ শ্লেষ্মা তরল করে নির্গমে সুবিধা ক’রে দেয় বলে সর্দি, কাশি এবং শ্বাসনালীর প্রদাহমূলক ব্যাধিতে বিশেষ উপকারী। তবে অধিক মাত্রায় খেলে বমি হয়, অন্তত: বমির ভাব বা নসিয়া হয়, অস্বস্তি হয়। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় বাসকের ভেষজ গুণাবলি প্রমাণিত হয়েছে।
এর মূল, পাতা, ফুল, ছাল সবই ব্যবহার হয়।
প্রয়োগ:
১. বাসক পাতার রস ১-২ চামচ হাফ থেকে এক চামচ মধুসহ খেলে শিশুর সদির্কাশি উপকার পাওয়া যায়।
২. বাসক পাতার রস স্নানের আধ ঘন্টা আগে মাথায় কয়েকদিন মাখলে উকুন মরে যায়। আমবাত ও ব্রণশোথে (ফোঁড়ার প্রাথমিক অবস্থা) বাসক পাতা বেটে প্রলেপ দিলে ফোলা ও ব্যথা কমে যায়।
৩. যদি বুকে কফ জমে থাকে এবং তার জন্যে শ্বাসকষ্ট হলে বা কাশি হলে বাসক পাতার রস ১-২ চামচ এবং কন্টিকারীরস ১-২ চামচ, ১ চামচ মধুসহ খেলে কফ সহজে বেরিয়ে আসে।
৪. প্রস্রাবে জ্বালা-যন্ত্রনা থাকলে বাসকের ফুল বেটে ২-৩ চামচ মিছরি ১-২ চামচ সরবত করে খেলে এই রোগে উপকার পাওয়া যায়।
৫. জ্বর হলে বা অল্প জ্বর থাকলে বাসকের মূল ৫-১০ গ্রাম ধুয়ে থেঁতো করে ১০০ মিলি লিটার জলে ফোটাতে হবে।
৬. ২৫ মিলি লিটার থাকতে নামিয়ে তা ছেঁকে নিয়ে দিনে ২ বার করে খেলে জ্বর এবং কাশি দুইই চলে যায়।
৭. বাসকের কচিপাতা ১০-১২ টি এক টুকরো হলুদ একসঙ্গে বেটে দাদ বা চুলকানিতে লাগলে কয়েকদিনের মধ্যে তা সেরে যায়।
৮. বাসকপাতা বা ফুলের রস ১-২ চামচ মধু বা চিনি ১চামচসহ প্রতিদিন খেলে জন্ডিস রেগে উপকার পাওয়া যায়।
৯. পাইরিয়া বা দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়লে বাসক পাতা ২০ টি থেঁতো করে ২ কাপ জলে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ঈষদুষ্ণ অবস্থায় কুলকুচি করলে এই রোগে উপকার পাওয়া যায়।
ভেষজ দাওয়াই:
* শিশুর পেটে কৃমি থাকলে বাসকের ছালের ক্বাথ খাওয়ালে এর উগ্র তিক্ত স্বাদ কৃমি বের হয়ে যায়।
* যাদের হাঁপানির টান আছে তারা বাসক পাতা শুকনো করে, ওই পাতা বিড়ি বা চুরুটের মতো পাকিয়ে এর সাহায্যে ধূমপান করলে শ্বাসকষ্ট প্রশমিত হয়।
* যাদের গায়ে ঘামের গন্ধ হয় তারা বাসক পাতার রস গায়ে লাগালে দুর্গন্ধ দূর হবে।
*বাসকপাতার রস ও শঙ্খচূর্ণ মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করলে রং ফরসা হবে।
* এক কলসি পানিতে তিন-চারটি বাসকপাতা ফেলে তিন-চার ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর সেই পানি বিশুদ্ধ হয়ে যায়। এরপর ব্যবহার করতে পারেন।
* পাতার রস নিয়মিত খেলে খিঁচুনি রোগ দূর হয়ে যায়।
* বাসক পাতার রস মাথায় লাগালের উকুন চলে যায়।
* বাসক পাতা বা ফুলের রস এক বা দুই চামচ মধু বা চিনি দিয়ে খেলে জন্ডিস ভালো হয়।
* শরীরে দাদ থাকলে বাসক পাতার রস লাগালে ভালো হয়ে যায়।
অন্যান্য উপকারিতা:
বাসকের পাতা সবুজ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং পাতা থেকে হলদে রং পাওয়া যায়। বাসক পাতায় এমন কিছু ক্ষারীয় পদার্থ আছে যায় ফলে ছত্রাক জন্মায় না এবং পোকামাকড় ধরে না বলে ফল প্যাকিং এবং সংরক্ষণ করার কাজে ব্যবহৃত হয়। পাতায় কিছু দুর্গন্ধ আছে বলে পগুরা মুখ দেয় না। সেই কারণে চাষ আবাদের জন্য জমি উদ্ধারের কাজে বাসকের পাতা বিশেষ উপকারী।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের আয়তন

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলই সবচেয়ে বড় ক্যাম্পাস নিয়ে গঠিত । এই ক্যাম্পাসগুলতে রয়েছে বিশাল জায়গা এবং একজন ছাত্রের জ্ঞানচর্চার নানা উপাদান । জেনে নিন আয়তনের দিক থেকে কোন বিশ্ববিদ্যালয় কত বড় । ১. চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (১৭৫৪ একর) ২. বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (১১৯৬ একর) © বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি তথ্য ও সহযোগিতা কেন্দ্র ৩. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (৭৫৩ একর) ৪. জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (৬৯৭ একর) ৫. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (৬০০ একর) © বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি তথ্য ও সহযোগিতা কেন্দ্র ৬. শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (৩২০ একর) ৭. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া (১৭৫ একর) ৮. চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১৬৩ একর) © বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি তথ্য ও সহযোগিতা কেন্দ্র ৯. রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১৫২একর) ১০. হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১৩০ একর) © বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি তথ্য ও সহযোগিতা কেন্দ্র ১১. খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (১০৬ একর) ১২. খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১০১ একর) ১৩. নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১০১ একর)...

বাংলা টাইপিং এ যুক্তাক্ষর

বিজয় বাংলা টাইপ করার অতি পরিচিত সফটওয়্যার । আমরা যারা বাংলা টাইপ করি বা বাংলায় লেখালেখি করি তাদের অনেকেরই যুক্তাক্ষর জনিত সমস্যা হয় । এই সমস্যা মুক্ত হবার জন্য যুক্তাক্ষরগুলোর টাইপিং প্রনালী দেয়া হলো । বাংলা টাইপিং এ যারা দুর্বল তাদের কাজে লাগবে। ১. ক্ষ = ক+ষ ২. ষ্ণ = ষ+ণ ৩. জ্ঞ = জ+ঞ ৪. ঞ্জ = ঞ+জ ৫. হ্ম = হ+ম ৬. ঞ্চ = ঞ+চ ৭. ঙ্গ = ঙ+গ ৮. ঙ্ক = ঙ+ক ৯. ট্ট = ট + ট ১০. ক্ষ্ম = ক্ষ + ম = ‍ক + ষ + ম ১১. হ্ন = হ + ন ১২. হ্ণ = হ + ণ ১৩. ব্ধ = ব + ধ ১৪. ক্র = ক + ্র (র-ফলা) ১৫. গ্ধ = গ + ধ ১৬. ত্র = ত + ্র (র-ফলা) ১৭. ক্ত = ক + ত ১৮. ক্স = ক + স ১৯. ত্থ = ত + থ (উদাহরন: উত্থান, উত্থাপন) ২০. ত্ত = ত + ত (উদাহরন: উত্তম, উত্তর, সত্তর) ২১. ত্ম = ত + ম (উদাহরন: মাহাত্ম্য) নিচের যুক্তবর্ণের তালিকাটি বাংলা সঠিকভাবে ল িখতে সহায়ক হতে পারে। এখানে বাংলায় ব্যবহৃত ২৮৫টি যুক্তবর্ণ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কোন যুক্তবর্ণ সম্ভবত বাংলায় প্রচলিত নয়। ক্ক = ক + ক; যেমন- আক্কেল, টেক্কা ক্ট = ক + ট; যেমন- ডক্টর (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/ বিদেশী কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত...

আইবি এ সম্পর্কে কিছু তথ্য

আইবিএ কি?? . আইবিএ হলো ইন্সটিটিউট অফ বিজনেস এ্যাডমিন্সট্রেশন। বাংলাদেশের মানুষের কাছে যে কয়ঠি ড্রিগ্রি খুব বেশি সম্মানিত হয় তার একটি হলো আইবিএ থেকে এমবিএ।বাংলাদেশের যে কয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইবিএ থেকে এমবিএ ড্রিগ্রি দেওয়া তার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় র আইবিএ সবার উপরে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় র আইবিএ তে ভর্তি হতে পারা অনেকটা স্বপ্নের মত।বলা যেতে পারে আইবিএ তে পড়তে পারলে জব আপনার পিছনে ঘুরবে আপনি জবের পিছনে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় র আইবিএ সম্মধে একটু আলোচনাঃ . ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইবিএ ইনস্টিটিউট যাত্রা শুরু করে ১৯৬৬ সালে।আইবিএ সংক্রান্ত দেশের সবচেয়ে প্রাচীন শিক্ষাপীঠ হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।পূর্বে বছরে একবার করে এমবিএ(মাস্টার্স অফ বিজনেস এ্যাডমিন্সট্রেশন) কোর্সে ভর্তি করানো হত।কিন্তু বর্তমানে দুবার করে নেওয়া হয়। দেশের মাত্র তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইবিএ ডিগ্রি নেওয়া সম্ভব,তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।১৯৯২ সালে যাত্রা শুরু করে জাবি র আইবিএ।অপরদিকে দেশের দ্বিতীয় সর্ব্বোচ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ...